অহং চন্দ্রং পশ্যামি।
ময়া চন্দ্রঃ দৃশ্যতে।
উপরের দুটো বাক্যের বক্তব্য বিষয় এক। কিন্তু বাক্য দুটোর প্রকাশভঙ্গি পৃথক। বাক্যের এরূপ বিভিন্ন প্রকাশ ভঙ্গিকে বাচ্য বলা হয়। সংস্কৃতে বাচা চার প্রকার-
২। কর্মবাচ্য
৩। ভাববাচ্য
৪। কর্মকর্তৃবাচ্য।
১। কর্তৃবাচ্য কর্তৃবাচ্য
বাক্যের যে রীতিতে কর্তার কথাই প্রধানভাবে বলা হয়, তাকে কর্তৃবাচ্য বলে। এই বাচ্যে কর্তৃকারকে প্রথমা বিভক্তি ও কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি হয় এবং ক্রিয়া কর্তার অধীন হয়, অর্থাৎ কর্তায় যে পুরুষ ও যে বচন হয়, ক্রিয়ায়ও সেই পুরুষ ও সেই বচন হয়ে থাকে।
নিচের শ্লোকটি মুখস্থ করলে কথাগুলো সহজে মনে থাকবে-
“লক্ষণং কর্তৃবাচ্যস্য প্রথমা কর্তৃকারকে।
দ্বিতীয়ান্তং ভবেৎ কর্ম কর্মাধীনং ক্রিয়াপদ।"
যেমন- পুরুষভেদে-
অহং চন্দ্রং পশ্যামি।
ত্বং চন্দ্রং পশ্যসি ।
বচনভেদে
স চন্দ্ৰং পশ্যতি। বালকঃ পুস্তকং পঠতি।
বালকৌ পুস্তকে পঠতঃ।
বালকাঃ পুস্তকানি পঠস্তি।
কর্মবাচ্য
বাক্যের যে রীতিতে কর্মের প্রাধান্য থাকে তাকে কর্মবাচ্য বলে। কর্মবাচ্যে কর্তায় তৃতীয়া ও কর্মে প্রথমা বিভক্তি হয় এবং কর্ম অনুসারে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। অর্থাৎ কর্ম যে
পুরুষ ও যে বচনের হয়, ক্রিয়াও সেই পুরুষ ও সেই বচনের হয়ে থাকে। এ বাচ্যে সকল ধাতুই আত্মন্নেপদী মনে রাখতে হবে-
"কর্মবাচ্যে প্রয়োগে তু তৃতীয়া কর্তৃকারকে। প্রথমাস্তং ভবেৎ কর্ম কর্মাধীনং ক্রিয়াপদঃ "
যেমন-
পুরুষভেদে
তেন অহং দৃশ্যে।
কেন ভূং দৃশ্যসে। ময়া বালকঃ দৃশ্যতে। ময়া বালকাঃ দৃশ্যন্তে। কর্মকর্তৃবাচ্য যে বাচ্যে কর্তার নিজগুণেই যেন আপনা থেকে কাজ হচ্ছে এরূপ বোঝায়, তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলা হয় । এ বাচ্যে ক্রিয়াটি সকর্মক হলেও অকর্মকরূপে ব্যবহৃত হয়, ধাতু আত্মনেপদী হন এবং কর্মপদ কর্তৃপদে পরিণত হয়। এখানে বৃক্ষটি আপনা আপনিই ভেঙে যাচ্ছে এরূপ বোঝায়।
ময়া সদৃশ্যতে।
ময়া বালকৌ দৃশ্যেতে।
ভাববাচ্য
যে বাচো ক্রিয়ার প্রাধান্য থাকে তাকে ভাববাচ্য বলে। এই বাচো কর্তৃকারকে তৃতীয়া বিভক্তি হয়, কর্ম থাকে না এবং ক্রিয়াপদ প্রথম পুরুষ ও এক বচনান্ত হয়। কর্মবাচ্যের মত লট প্রভৃতি ভান বিভক্তিতে ধাতুর উত্তর
“হয়।
স্মরণ রাখতে হবে-
“ভাববাচ্যে কর্মাভাবস্তৃতীয়া কর্তৃকারকে।
প্রথম পুরুষাকবচনং স্যাৎ ক্রিয়াপদেঃ"
যেমন- শিশুনা শয্যতে।
বালকৈঃ হস্যতে।
যেমন- ভিসাতে বৃক্ষঃ।
অনুরূপ উদাহরণঃ
ছিলাতে বাম্ ।
পচাতে ওদনা
বাচ্য পরিবর্তন
বিলাতে হৃদয়গ্রস্থিঃ।
অর্থের পরিবর্তন না ঘটিয়ে এক বাচ্যের বাক্যকে অন্য বাচ্যে রূপান্তরিত করার নাম বাচ্য পরিবর্তন।
মনে রাখবে-
১। কর্তৃবাচ্যের বাক্যে যদি কর্ম থাকে, তবেই তাকে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করা যায়। নতুবা কর্তৃবাচ্যকে ভাববাচ্যে পরিণত করা চলে।
২। কর্মবাচ্যে ও ভাববাচ্যের বাক্যকে কর্তৃবাচ্যে পরিণত করা যায় । ৩। ক্রিয়া সকর্মক হলেও যদি কর্ম না থাকে, তবে সেই বাক্যকে ভাববাচ্যে পরিণত করা চলে।
বাচ্য পরিবর্তনের সাধারণ নিয়ম
কর্তৃবাচ্য
১। কায় প্রথমা।
২। কর্তার বিশেষণে প্রথমা।
৩। কর্মে দ্বিতীয়া।
৪। কর্মের বিশেষণে দ্বিতীয়া । ৫। কর্তা অনুযায়ী ক্রিয়া।
কর্মবাচ্য
১। কর্তায় তৃতীয়া।
২। কর্তার বিশেষণে তৃতীয়া।
৩। কর্মে প্রথমা।
৪। কর্মের বিশেষণে প্রথমা।
৫। কর্ম অনুযায়ী কিনা।
সেই লোট প্রভৃতি চারটি বিষক্তিতে 'য' হয়। ধাতু আত্মনেশনী হয়।
ভাববাচ্য
১। কায় তৃতীয়া।
২। ক্রিয়া প্রথম পুরুষের একবচন, আত্মনোপনী এবং লট প্রভৃতি চার বিভক্তিতে 'য' হয়।
বাচ্য পরিবর্তনের আদর্শ
কর্তৃগাছাস চন্দ্ৰং পশ্যতি।
কর্মবাচ্য তেন চন্দ্ৰঃ দৃশ্যতে। কর্তৃবাচ্য [বৃদ্ধা ব্রাহ্মণা বেদং পঠতি।
কে কর্মবাচ্য) --- বুদ্ধেন ব্রাহ্মণেন লেদা পঠাতে।
কর্তৃবাচ্য ধর্মঃ রক্ষতি ধার্মিক।
কর্মবাচ্য ধর্মেণ ধার্মিকঃ রক্ষাতে।
কর্তৃবাচ্য—স মৃগং পশ্যতি।
কর্মবাচ্য)——- তেন মৃগঃ দৃশ্যতে।
কর্তৃবাচ্য তুং মৃগৌ পশ্যসি ।
কর্মবাচ্য ভুয়া মৃগৌ দৃশ্যেতে।
কর্তৃবাচ্য)—— অহং মৃগান পশ্যামি ।
কর্মবাচ্য ময়া মৃগাঃ দৃশ্যন্তে।
কর্তৃবাচ্য তে বনে তিষ্ঠন্তি
ভাববাচ্য তৈঃ বনে স্মীয়তে।
কর্তৃবাচ্য তুষ্টাঃ শিশবা হসন্তি।
ভাববাচ্য— তৃষ্টৈ। শিশুভিঃ হসাতে।
কর্তৃবাচা — অহং তিষ্ঠামি ।
ভাববাচ্য — ময়া স্বীয়তে।
আরও দেখুন...